শেখ রাজীব হাসান,গাজীপুরঃ
গাজীপুরের টঙ্গীতে ভাওয়াল বীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টারের ৭১তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের পরিশ্রমী নেতা মোঃ মোশিউর রহমান সরকার বাবু’র উদ্যোগে আলোচনা সভা,দোয়া ও কেক কাটা অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। ৯ই নভেম্বর দিবাগত রাত ১২টা ১মিনিটে টঙ্গী নতুন বাজার এলাকায় আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টারের জন্য বিশেষ দোয়া ও কেক কাটা হয়।
গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগ নেতা মোঃমোশিউর রহমান সরকার বাবু’র আয়োজিত আলোচনা সভা,দোয়া ও কেক কাটা অনুষ্টানে উপস্থিত ছিলেন,ভাওয়াল বীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টার এমপি এর সহোদর (ছোট ভাই) ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ মতিউর রহমান মতি,সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইলিয়াস আহমদ,ছোট বোন নাজমা হোসেন,৫৪ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী হাজী বাবলু,বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের গাজীপুর মহানগর শাখার সভাপতি মোঃ রেজাউল করিম, যুবলীগ নেতা জসিম মাতবর,৫৬নং ওয়ার্ড যুবলীগের আহবায়ক সদস্য মোঃ আল-আমিন হোসেন,ছাত্রলীগ নেতা জাহিদুল কবির আনোয়ার,মহানগর ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতা হুমায়ুন কবির বাপ্পী, টঙ্গী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদি হাসান কানন মোল্লাসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীগণ।
মতিউর রহমান মতি বলেন,আহসান উল্লাহ মাষ্টার সকল সময় গরীব, আসহায় ও মেহনতি মানুষের বন্ধু হিসেবে কাজ করেছেন। বিএনপি, জামায়েতের শক্তিকে পরাজিত করে ১৯৮৩ সালের পুবাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ প্রতিটি নির্বাচনে তিনি জয়ী হয়েছেন বিপুল ভোটে। ১৯৮৮ সালে পুবাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এর আগে তিনি ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আপনাদের ভালোবাসায় আহসানউল্লাহ মাস্টার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০৪ সালের ৭ মে গাজীপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ ও জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি পদে থাকাকালীন সময়ে সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে নিহত হয়েছিলেন আহসানউল্লাহ মাস্টার। আমার চোখের সামনে আমার ভাই মারা যায়। আমার যতো কষ্ট হোক ভাই হত্যার বিচার হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি লড়ে যাবো। মামলাটি বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে আছে। সবাই দোয়া করবেন আল্প সময়ের মধ্যে আমরা আবশ্যই ভালো ফল পাবো। যারা এই আয়োজন করেছেন আমি সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টারঃ ১৯৫০ সালের ৯ই নভেম্বর তৎকালীন ঢাকা জেলার পুবাইল ইউনিয়নের হায়দারাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। শিক্ষাজীবনের শুরু হায়দারাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও টঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। ১৯৬২ সালে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন-এর বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি। তখন তিনি ছাত্রলীগ করতেন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবি নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা যখন রাজপথে,তখনো আহসানউল্লাহ মাষ্টার সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৬৯ সালে ১১ দফার আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন তিনি। ১৯৬৫ সালে এসএসসি পাশ করে তৎকালীন কায়েদে আজম কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৭০ সালে ডিগ্রী পাশ করে আহসানউল্লাহ টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া হাই স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে (১৯৭৭-১৯৮৪) সহকারী প্রধান ও (১৯৮৪-২০০৪) সাল পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেন। তিনি টঙ্গী শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। এর মাঝে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার আগে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটক ও নির্যাতিত হয়েছিলেন। ভারতের দেরাদুনের তান্দুয়া থেকে গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে পুবাইল,টঙ্গী,ছয়দানাসহ বিভিন্ন জায়গায় গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ জয়দেবপুরের ক্যান্টনমেন্টের বাঙালী সৈন্যদের নীরস্ত্র করতে ঢাকা থেকে আসা পাকিস্তানি বাহিনীকে ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেয়ার জন্য জনতাকে উদ্বুদ্ধ করার কাজে তার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। ১৯৮৩ সালের পুবাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ প্রতিটি নির্বাচনে তিনি জয়ী হয়েছেন বিপুল ভোটে। ১৯৮৮ সালে পুবাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এর আগে তিনি ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া আহসানউল্লাহ মাস্টার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) চেয়ারম্যান ছিলেন। তার জ্যেষ্ঠ ছেলে মো.জাহিদ আহসান রাসেল বর্তমানে জাতীয় সংসদের সদস্য,ছোট ছেলে জাবিদ আহসান সোহেল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। ২০০৪ সালের ৭ মে গাজীপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ ও জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি পদে থাকাকালীন সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে নিহত হয়েছিলেন আহসানউল্লাহ মাস্টার। এ ঘটনার পরদিন তার ভাই মতিউর রহমান টঙ্গী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় ২০০৪ সালের ১০ জুলাই পুলিশ অভিযোগপত্র দায়ের করে। ঢাকার একটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল ২২ আসামিকে মৃত্যুদন্ড ও ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন। খালাস দেওয়া হয় দুই আসামিকে। তার নাম অনুসারে গাজীপুর এর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর সম্মান(স্নাতক) ছাত্র হল ও ডুয়েটের অডিটোরিয়ামের নাম করণ করা হয়েছে,এবং ২০১৩ সালে টঙ্গীতে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়াম নির্মিত হয়েছে। এড়াও টঙ্গীতে তার স্মৃতিতে শহীদ আহসান উল্লা মাষ্টার উড়াল সেতু ও আহসান উল্লা মাষ্টার জেনারেল হাসপাতাল নামে একটি হাসপাতাল রয়েছে। এছাড়া আহসানউল্লাহ মাষ্টারের মৃত্যুর পর তার তার ছোট ভাই গাজীপুরের মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থেকে গাজীপুরের রাজনীতিকে সুসংগঠিত করছেন। এছাড়া তার সুযোগ্য সন্তান আলহাজ্ব জাহিদ আহসান রাসেল গাজীপুর-২ আসনের এমপি হয়ে গাজীপুর তথা দেশব্যাপী নেতৃত্ব দিচ্ছেন।বর্তমানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রাণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।